অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া :- বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে পরিবেশবিদদের মাথাব্যথা থাকলেও মাথাব্যথা নেই জনসাধারণ থেকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির নেতা -নেত্রী, কর্মী - সমর্থক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পূজা কমিটি, সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলির। " একটি গাছ একটি প্রাণ " এক সময়ে এই শ্লোগানটি ছিল বৃক্ষের প্রতি যত্মবান হওয়ার একমাত্র শিরোনাম শ্লোগান। তারপর এল " একটি শিশু বৃক্ষ একটি শিশুর সমান " ।
একটি শিশুকে যেমন যত্ম , পরিচর্যা করে লালন -পালন করা হয় , তেমনি একটি শিশু বৃক্ষকে আদর যত্ম , পরিচর্যা করা বড় করতে হয়। এই সহজ কথাটি সাধারণ মানুষ থেকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির নেতা -নেত্রী, কর্মী - সমর্থক , ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এর মালিক, ক্লাব প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পূজা কমিটির কর্তা ব্যক্তিরা বুঝতেই চায় না। এমনকি সরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ উৎসব ঢাক - ঢোল পিটিয়ে পালন করা হয়। সরকারি ভাবে বন দফতরের কঠোর নির্দেশ আছে ' ছোট - বড় কোনো গাছ কাটা যাবে না। ছোট - বড় কোনো গাছে পেরেক সেঁটে তাকে কোনো প্রচার মাধ্যমের হাতিয়ার করা যাবে না ' । অথচ বাস্তব চিত্র অন্যরকম কথা বলছে। সরকারি নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করেই সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখিয়ে যত্রতত্র ছোট থেকে বড় গাছ নির্বিচারে কাটা যেমন হচ্ছে, তেমনি কোনো নিয়ম না মেনেই সড়ক পথের ধারে,গ্ৰামগঞ্জের মূল সড়ক পথের ধারে, পাড়ায় পাড়ায় ভিতরের রাস্তার ধারে ছোট - বড় গাছের গায়ে বিভিন্ন সাইন বোর্ড, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড,ব্যানার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলির পতাকা বড় বড় পেরেকে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে।এই কাজ গুলি যেমন বিভিন্ন ক্লাব প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, পূজা কমিটি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিদ্যালয়, ব্যবসায়িক বিদ্যালয় গুলি করছে এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল গুলি,অসাধু ব্যবসায়ীরা রাস্তার ধারে নির্বিচারে গাছ কাটছে, তাদের প্রচারের জন্য দলীয় পতাকা, ফেস্টুন,ব্যানার, প্ল্যাকার্ড,ফ্লেক্স ছোট - বড় গাছ গুলিতে বড় বড় পেরেক সাঁটিয়ে টাঙিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে।শাসক দল থেকে বিরোধী দল গুলির প্রচার মাধ্যমের কোপে পড়েছে ছোট - বড় সব বৃক্ষ। শহরাঞ্চল থেকে গ্ৰামাঞ্চলের সড়ক পথ থেকে গ্ৰামীণ রাস্তা,পাড়ার অলিগলিতে থাকা ছোট -বড় বৃক্ষ গুলির দিকে তাকালে একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, ছোট - বড় বৃক্ষগুলো ক্রুশবিদ্ধ। একটি গাছে আগে দেখা যেত ৩ থেকে ৪ টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, পূজা কমিটি, ক্লাব প্রতিষ্ঠান এর পেরেক সাঁটা সাইন বোর্ড, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ফ্লেক্স ছিল।এখন এর পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির ৮ থেকে ১০ টি ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ফ্লেক্স, দলীয় পতাকা বড় বড় পেরেক সাঁটিয়ে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।এমন দৃশ্য বড়ই বেদনা দায়ক। সরকারি নিয়মকে মান্যতা দিয়ে সেই নির্দেশ রক্ষা করা ও আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক, মহকুমা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, মহকুমা পুলিশ প্রশাসন, মহকুমা পুলিশ সুপার, জেলা পুলিশ প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপার,বন দফতরের আধিকারিক কারো কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি শাসক দল থেকে বিরোধী দল গুলি ও সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখাচ্ছে। প্রায়শই দেখা যাচ্ছে যে সমস্ত গাছগুলিতে যথেচ্ছ ভাবে পেরেক সেঁটে সাইনবোর্ড, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ফ্লেক্স,দলীয় পতাকা টাঙানো হয়েছে সেই সমস্ত গাছ গুলি আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হচ্ছে। উন্নয়নের দাপটে এবং পরিবারের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুকুর,খাল, জলাশয়, জলাভূমি বুজিয়ে কারখানা, দোকান, বাড়ি হচ্ছে। মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জল দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাস্তার ধারে ট্যাপ কল তৈরী হয়েছে এই জল যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করার জন্য জলের অপচয় হচ্ছে। আস্তে আস্তে ভূগর্ভস্থ জল সংকটের দিকে দেশবাসী এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের অসচেতনতার জন্য। এই কারণ গুলির জন্য প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। ফলে মানুষ নিত্যনতুন নানাবিধ ব্যাধির শিকার হচ্ছে।প্রচন্ড গরমের সম্মুখীন হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।নদী,খাল -বিল, পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমে আসছে। এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাওড়া জেলার
জগৎবল্লভপুর ব্লক তথা জগৎবল্লভপুর থানা ও জগৎবল্লভপুর বিধান সভার অন্তর্গত পোলগুস্তিয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষিকারা গাছ,জল, জলাভূমি বাঁচানোর জন্য বিদ্যালয়ের কচিকাঁচা পড়ুয়াদের মাধ্যমে " গাছ বাঁচাও,জল ও জলাভূমি বাঁচাও " সচেতনতা শিবির ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। মহতী এই সচেতনতা শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জন কুন্ডু, পোলগুস্তিয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ নিজাম, পোলগুস্তিয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সদস্য পূর্ণ সাধুখাঁ, কামিনী চোংদার। বিদ্যালয়ের চর্তুসীমার মধ্যে বৃক্ষ রোপন করে সচেতনতা শিবির ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জন কুন্ডু। পোলগুস্তিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির সূচনা করেন জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রঞ্জন কুন্ডু।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষক -শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় ছাত্র -ছাত্রীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের মধ্যে ও বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী স্থানে বৃক্ষ রোপন করা হয়।পথ চলতি মানুষদের হাতে গাছ উপহার হিসাবে তুলে দেন বিদ্যালয়ের কচিকাঁচা পড়ুয়ারা। ছাত্র -ছাত্রীরা গাছকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে শপথ নেন, " তারা বৃক্ষ ছেদন করবে না এবং কাউকে বৃক্ষ ছেদন করতে দেবে না। ছাত্র -ছাত্রীরা বলে ' গাছ আমাদের বন্ধু।জল আমাদের জীবন ।এর অপচয় হতে দেব না। গাছ ,জল ও জলাভূমি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। এদের আমরা রক্ষা করবোই। এবং অন্যদের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দেব " । এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল পোলগুস্তিয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ,সহ শিক্ষক শৌর্য্যদীপ্ত (সঞ্জু) নস্কর, শিক্ষক - শিক্ষিকা শ্যামল মন্ডল,মিতুল সাঁতরা,অমিতা,সৌমিতা। শিশু সংসদ এর প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী প্রীতম ও প্রলয়। এই অনুষ্ঠানে ছাত্র -ছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবক - অভিভাবিকা,গ্ৰামবাসীদের উপস্থিতি ছিল প্রশংসনীয়। বিদ্যালয়ের এই ধরনের সচেতনতা মূলক শিবির করার জন্য প্রত্যেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষিকাদের প্রশংসা করেন।তারা শিক্ষক - শিক্ষিকাদের অনুরোধ করেন সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছাত্র -ছাত্রীদের সচেতনতা শিবির এর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত সামাজিক মানুষ তৈরি করার
0 Comments